অরিত্র রায়
মহান বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালেলির নাম প্রায় সকলেরই জানা। ১৫৬৪ খ্রীষ্টাব্দে ইতালীর পিসা শহরে তিনি জন্মগ্রহন করেন। ঈশ্বরদত্ত প্রতিভার তিনি বিচ্ছুরণ ঘটাতে থাকেন শৈশব থেকেই। ১৬৪২ এর ৯ই জানুয়ারী পর্যন্ত তাঁর ৭৭ বছরের জীবনে বিতর্ক ছিল আজন্ম সঙ্গী। তবে, বিতর্ককে দূরে সরিয়ে রেখে বিজ্ঞানের রঙ্গক্ষেত্রে তাঁর পদার্পন বিজ্ঞানের ইতিহাসে তাঁকে অমর করে রেখেছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানও তাঁর সান্নিধ্যলাভের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়নি।
গ্যালিলিও ও কোপারনিকাস
গ্যালিলিও বিশ্বাস করতেন পৃথিবী গোলাকার। তাই, কোনো বস্তুর আনুভূমিক গতির অর্থ হল ভূপৃষ্ট বরাবর বক্ররেখার চলন। এই গতি যদি প্রতিরোধশক্তিহীন হয়, তবে বস্তুটি বৃত্তাকার পথে পরিক্রমণ করবে। এই ধারণার উপর ভিত্তি করে তিনি সৌরকেন্দ্রিক ব্রহ্মান্ডের ব্যাখ্যা করেন। এই প্রসঙ্গে চলে আসে কোপারনিকাসের কথা। তিনি তো আসলে কোপারনিকাস পন্থীই ছিলেন।
এবার বরং একটু জেনে নিই কোপারনিকাসের কথা। কোপারনিকাস তাঁর লেখা যুগান্তরকারী বই 'On the revolution of celestial sphere (in Latin- De reve loutionobous orbium celestium)-তে দু'হাজার বছরের ভ্রান্ত পৃথিবী কেন্দ্রিক ব্রহ্মান্ডের ধারণাকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দেয়। আসলে গ্যালিলিও এই বইটি থেকেই উদ্ধুদ্ধ হয়ে কোপারনিকাসের মতবাদ গ্রহণ করেন। সে যাই হোক, সত্যকে নগ্ন করে তোলা এই বই তৎকালীন ভাববাদী দার্শনিক, ধর্মযাজক, জ্যোতিষদের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে ওঠে। ফলে বইটি দীর্ঘকাল থেকে যায় অবহেলিত। কোপারনিকাস তাঁর এই বইতে পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতির পরিচয় দেন। এরপর তিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আপেক্ষিক গতি ও স্থিতির ধারণাও এই বইতে দিয়েছিলেন।
একদম সংক্ষেপে তাঁর সূর্যকেন্দ্রিক মতবাদ দেখে নেওয়া যাক।
"প্রথমে ও সবার উপরে বিরাজ করছে স্থির নক্ষত্রের গোলক; এই গোলক ও ইহার অন্তর্ভুক্ত বস্তু নিস্তল; প্রকৃতপক্ষে ইহাই ব্রহ্মান্ডের কাঠামো.....ইহাদের সকল মধ্যস্থলে সূর্য....."*
গ্যালিলিও
গ্যালিলিও ও কেপলার
প্রসঙ্গত, আরও একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানের দূরদর্শীর নাম চলে আসে। তিনি কেপলার। কেপলারও সূর্যকেন্দ্রিক মতবাদের সমর্থক ছিলেন। ১৫৯৭ সালে কেপলার একটি বই লেখেন, নাম- 'Mysterium Cosmographium'. বইয়ের একটি কপি তিনি গ্যালিলিওকেও পাঠান। গ্যালিলিও বইটি পেয়ে চিঠিতে লেখেন-"আপনার বইটি আমি পেয়েছি। মনোযোগ দিয়ে এটি পড়ব। আনন্দ পাচ্ছি এই ভেবে যে আপনিও আমার মত সূর্যকেন্দ্রিক ব্রহ্মান্ডের সমর্থক। আমি বহুদিন ধরেই কোপারনিকাসের মতবাদে বিশ্বাসী। আমি দেখেছি বিরোধী মতগুলি দিয়ে বহু প্রাকৃতিক ঘটনার সুসংহত ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না, কোপারনিকাসের পরিকল্পনার সাহায্যে সেসব ঘটনা খুব সহজেই ব্যাখ্যা করা যায়। এ সম্বন্ধে আমি অনেক যুক্তি প্রমাণ তৈরী করেছি; কিন্তু প্রকাশ করার ভরসা পাচ্ছি না। কোপারনিকাস অনেকদিন হল মারা গেছেন। বিরোধীরা এখনও তাঁকে আক্রমণ করতে ছাড়ে না। ব্রুনোকে কিভাবে নির্যাতিত হতে হচ্ছে তা নিশ্চয়ই শুনেছেন। কিছু লিখলে যদি আমাকেও ওই অবস্থায় পড়তে হয়? তাই সাহস পাচ্ছি না।"
এর প্রত্যুত্তরে কেপলার অনেক করে তাঁর যুক্তি প্রমাণের অনুরোধ জানান। কিন্তু গ্যালিলিও তা করেননি। এখানে প্রশ্ন চলে আসে; যিনি পিসায় প্রাচীনপন্থীদের তর্কে পর্যুদস্তু করেন, তিনি পাদুয়ায় এসে কেন ভয় পেয়ে গেলেন? হতে পারে তিনি হয়তো পিসায় থাকাকালীন অ্যারিস্টটলের বিরুদ্ধ মত পোষণের জন্য যে অভিজ্ঞার সন্মুখীন হন, পাদুয়ায় তিনি তার পুনরাবৃত্তি চাননি। আবার এও হতে পারে, তিনি হয়তো পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নিজের যুক্তি প্রমাণের বুনিয়াদ আরও শক্ত করে নামতে চেয়েছিলেন লড়াইয়ের মাঠে। কে জানে?
দূরবীন ও গ্যালিলিও
এবার বরং প্রত্যক্ষভাবে জেনে নিই জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর কথা। আর ক্ষেত্রে প্রথমেই মনে পরে দূরবীনের কথা। অনেকের ধারণা যে গ্যালিলিও সর্বপ্রথম দূরবীন আবিষ্কার করেন। কিন্তু সত্যিটা হল এই যে গ্যালিলিও দূরবীনের উন্নতি ঘটান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে তার প্রথম ব্যাপক প্রয়োগ ঘটান। আসলে দূরবীনের আবিষ্কর্তা কে, তা নিয়ে একটি বিতর্ক আছে। অনেকে হল্যান্ডের হানস্ লিপারশে-কে দূরবীন আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেন। কিন্তু তার আগে ইংল্যান্ডের লিওনার্ড ডিগস্ এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন। পোর্তো বা রজার বেকনের রচনাতেও দূরবীনের উল্লেখ রয়েছে।
১৬০৯ সালের ডিসেম্বরে গ্যালিলিও একটি দূরবীন তৈরী করেন।'কুড়ি' বিবর্ধক ক্ষমতাযুক্ত এই যন্ত্রটির সাহায্যে তিনি মহাকাশে ব্যাপক অনুসন্ধান চালান। জ্যোতির্বিজ্ঞানে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, তবেই তিনিই কী প্রথম দূরবীনে চোখ রেখে আকাশ দেখেন? ইংরেজ গনিতবিদ টমাস হ্যারিয়ট এবং জার্মানীর সাইমন অ্যারিয়াস এ কৃতিত্ব দাবি করলেও এ কথা হলফ করে বলা যায় যে, গ্যালিলিওই প্রথম দূরবীনের মাধ্যমে ধারাবাহিক ভাবে বিজ্ঞান চর্চা করেন।
গ্যালিলিও ও বৃহস্পতির চাঁদ আবিষ্কার
দূরবীন ব্যবহারের পরের বছর, অর্থাৎ ১৬১০ খ্রীষ্টাব্দের ৭ই জানুয়ারী বৃহস্পতির দিকে দূরবীন ঘোরালেই গ্যালিলিও দেখলেন এক আশ্চর্য কান্ড। বৃহস্পতির গাঁ ঘেষে তিনটি ছোটো ছোটো আলোর বিন্দু। ওগুলি কী? কোনো অজানা জ্যোতিষ্ক? পরের দিন আরও আশ্চর্য হওয়ার পালা। আলোর বিন্দুগুলির স্থান পরিবর্তন ঘটেছে। জ্যোতিষ্ক তিনটি নক্ষত্র হলে তো বৃহস্পতির গতির জন্য তাদের এরূপ স্থান পরিবর্তন ঘটবে না। তবে এগুলো কী? নতুন গ্রহ নয় তো? একদিন বাদ দিয়ে ১০ই জানুয়ারী দেখলেন একটি বাদ দিয়ে বাকি দুটি দেখা যাচ্ছে। পরের দিন আবার দুটি দেখা গেল। তবে আরেকটা গেল কোথায়? গ্যালিলিও উদগ্রীব হয়ে পড়লেন। বৃহস্পতির দিকে ১২ই জানুয়ারী তাকাতেই দেখলেন অন্য জ্যোতিষ্কটি ফিরে এসেছেন। পরের দিন আবার একটি জ্যোতিষ্ক বেড়ে গেল। বহু রাত ধরে গ্যালিলিও এগুলি পর্যবেক্ষণ করলেন। তিনি কসিমো দি মেদেচির নামে এগুলির নাম রাখলেন। মেদেচি গ্রহ (Medechian Stars) কেপলার পরে একে গ্রহ না বলে উপগ্রহ বলার প্রস্তাব দেন।
প্রসঙ্গত, আরও একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানের দূরদর্শীর নাম চলে আসে। তিনি কেপলার। কেপলারও সূর্যকেন্দ্রিক মতবাদের সমর্থক ছিলেন। ১৫৯৭ সালে কেপলার একটি বই লেখেন, নাম- 'Mysterium Cosmographium'. বইয়ের একটি কপি তিনি গ্যালিলিওকেও পাঠান। গ্যালিলিও বইটি পেয়ে চিঠিতে লেখেন-"আপনার বইটি আমি পেয়েছি। মনোযোগ দিয়ে এটি পড়ব। আনন্দ পাচ্ছি এই ভেবে যে আপনিও আমার মত সূর্যকেন্দ্রিক ব্রহ্মান্ডের সমর্থক। আমি বহুদিন ধরেই কোপারনিকাসের মতবাদে বিশ্বাসী। আমি দেখেছি বিরোধী মতগুলি দিয়ে বহু প্রাকৃতিক ঘটনার সুসংহত ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না, কোপারনিকাসের পরিকল্পনার সাহায্যে সেসব ঘটনা খুব সহজেই ব্যাখ্যা করা যায়। এ সম্বন্ধে আমি অনেক যুক্তি প্রমাণ তৈরী করেছি; কিন্তু প্রকাশ করার ভরসা পাচ্ছি না। কোপারনিকাস অনেকদিন হল মারা গেছেন। বিরোধীরা এখনও তাঁকে আক্রমণ করতে ছাড়ে না। ব্রুনোকে কিভাবে নির্যাতিত হতে হচ্ছে তা নিশ্চয়ই শুনেছেন। কিছু লিখলে যদি আমাকেও ওই অবস্থায় পড়তে হয়? তাই সাহস পাচ্ছি না।"
এর প্রত্যুত্তরে কেপলার অনেক করে তাঁর যুক্তি প্রমাণের অনুরোধ জানান। কিন্তু গ্যালিলিও তা করেননি। এখানে প্রশ্ন চলে আসে; যিনি পিসায় প্রাচীনপন্থীদের তর্কে পর্যুদস্তু করেন, তিনি পাদুয়ায় এসে কেন ভয় পেয়ে গেলেন? হতে পারে তিনি হয়তো পিসায় থাকাকালীন অ্যারিস্টটলের বিরুদ্ধ মত পোষণের জন্য যে অভিজ্ঞার সন্মুখীন হন, পাদুয়ায় তিনি তার পুনরাবৃত্তি চাননি। আবার এও হতে পারে, তিনি হয়তো পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নিজের যুক্তি প্রমাণের বুনিয়াদ আরও শক্ত করে নামতে চেয়েছিলেন লড়াইয়ের মাঠে। কে জানে?
দূরবীন ও গ্যালিলিও
এবার বরং প্রত্যক্ষভাবে জেনে নিই জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর কথা। আর ক্ষেত্রে প্রথমেই মনে পরে দূরবীনের কথা। অনেকের ধারণা যে গ্যালিলিও সর্বপ্রথম দূরবীন আবিষ্কার করেন। কিন্তু সত্যিটা হল এই যে গ্যালিলিও দূরবীনের উন্নতি ঘটান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে তার প্রথম ব্যাপক প্রয়োগ ঘটান। আসলে দূরবীনের আবিষ্কর্তা কে, তা নিয়ে একটি বিতর্ক আছে। অনেকে হল্যান্ডের হানস্ লিপারশে-কে দূরবীন আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেন। কিন্তু তার আগে ইংল্যান্ডের লিওনার্ড ডিগস্ এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন। পোর্তো বা রজার বেকনের রচনাতেও দূরবীনের উল্লেখ রয়েছে।
১৬০৯ সালের ডিসেম্বরে গ্যালিলিও একটি দূরবীন তৈরী করেন।'কুড়ি' বিবর্ধক ক্ষমতাযুক্ত এই যন্ত্রটির সাহায্যে তিনি মহাকাশে ব্যাপক অনুসন্ধান চালান। জ্যোতির্বিজ্ঞানে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, তবেই তিনিই কী প্রথম দূরবীনে চোখ রেখে আকাশ দেখেন? ইংরেজ গনিতবিদ টমাস হ্যারিয়ট এবং জার্মানীর সাইমন অ্যারিয়াস এ কৃতিত্ব দাবি করলেও এ কথা হলফ করে বলা যায় যে, গ্যালিলিওই প্রথম দূরবীনের মাধ্যমে ধারাবাহিক ভাবে বিজ্ঞান চর্চা করেন।
গ্যালিলিও ও বৃহস্পতির চাঁদ আবিষ্কার
দূরবীন ব্যবহারের পরের বছর, অর্থাৎ ১৬১০ খ্রীষ্টাব্দের ৭ই জানুয়ারী বৃহস্পতির দিকে দূরবীন ঘোরালেই গ্যালিলিও দেখলেন এক আশ্চর্য কান্ড। বৃহস্পতির গাঁ ঘেষে তিনটি ছোটো ছোটো আলোর বিন্দু। ওগুলি কী? কোনো অজানা জ্যোতিষ্ক? পরের দিন আরও আশ্চর্য হওয়ার পালা। আলোর বিন্দুগুলির স্থান পরিবর্তন ঘটেছে। জ্যোতিষ্ক তিনটি নক্ষত্র হলে তো বৃহস্পতির গতির জন্য তাদের এরূপ স্থান পরিবর্তন ঘটবে না। তবে এগুলো কী? নতুন গ্রহ নয় তো? একদিন বাদ দিয়ে ১০ই জানুয়ারী দেখলেন একটি বাদ দিয়ে বাকি দুটি দেখা যাচ্ছে। পরের দিন আবার দুটি দেখা গেল। তবে আরেকটা গেল কোথায়? গ্যালিলিও উদগ্রীব হয়ে পড়লেন। বৃহস্পতির দিকে ১২ই জানুয়ারী তাকাতেই দেখলেন অন্য জ্যোতিষ্কটি ফিরে এসেছেন। পরের দিন আবার একটি জ্যোতিষ্ক বেড়ে গেল। বহু রাত ধরে গ্যালিলিও এগুলি পর্যবেক্ষণ করলেন। তিনি কসিমো দি মেদেচির নামে এগুলির নাম রাখলেন। মেদেচি গ্রহ (Medechian Stars) কেপলার পরে একে গ্রহ না বলে উপগ্রহ বলার প্রস্তাব দেন।
বৃহস্পতির চাঁদ আবিষ্কার প্রমাণ করে দেয় যে গ্রহ-নক্ষত্ররা যে শুধু পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে, একথা ঠিক নয়। অ্যারিস্টটল পন্থীরা বলতেন, পৃথিবীর গতি থাকলে চাঁদ তাকে কী করে প্রদক্ষিণ করবে? তার তো পৃথিবীর পিছনে পড়ে থাকার কথা। গ্যালিলিও পাল্টা প্রশ্ন তুললেন, বৃহস্পতির তো গতি আছে। তবে তার চারপাশে চারটি গ্রহ চাঁদ কীভাবে ঘুরছে? উত্তর পেলেন না।
এই আবিষ্কারকে প্রাচীনপন্থীরা দৃষ্টিভ্রম বলে উড়িয়ে দিতে চাইলেন। কিন্তু সত্য কখনও চাপা থাকে না। ইওরোপে তা ধীরে ধীরে গ্রহণযোগ্যতা পেল।
গ্যালিলিও - চাঁদের কলঙ্ক ও শনির বলয়
গ্যালিলিও তাঁর দূরবীনের সাহায্যে একের পর এক রহস্যের পর্দা উন্মোচন করতে থাকেন। আমরা যে কন সুন্দর কিছু বোঝাতে যার সঙ্গে তুলনা করতে থাকি, সেই চাঁদকেও গ্যালিলিও ছাড়লেন না। তিনি বললেন চাঁদ নাকি মোটেই সুন্দর না, বরঞ্চ, খানা, খন্দ, পাহাড়-পর্বতে ভর্তি। গ্যালিলিওর মাথায় এবার ভাবনা এল যে, এই পাহাড়-পর্বতের উচ্চতা মাপলে কেমন হয়? যেমন ভাবা তেমন কাজ। মেপে ফেললেন উচ্চতা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আধুনিক পর্যবেক্ষণের থেকে তাঁর মাপজোপ ছিল যৎসামান্য বেশি।
১৬১০ খ্রিষ্টাব্দের শেষভাগে গ্যালিলিও পাদুশ ছেড়ে যাওয়ার আগে শনি গ্রহের এক অদ্ভুত বাহ্যিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। শনি যেন তিনটি ভাগে বিভক্ত। জীবদ্দশায় তিনি এর ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। ১৬৫৫ই ক্রিশ্চিয়ান হাইজেনস্ এর রহস্য উন্মোচন করেন। তিনি বললেন শনিকে ঘিরে বলয় রয়েছে। যার জন্য এর এরকম চেহেরা।
শুক্রগ্রহ ও গ্যালিলিও
ফ্লোরেন্সে এসে গ্যালিলিও শুরু করলেন শুক্রগ্রহ নিয়ে গবেষণা। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী টলেমি বলেন যে, শুক্রের অর্ধাংশ সর্বদা অন্ধকার ও অর্ধাংশ সর্বদা আলোকিত থাকে। কিন্তু, গ্যালিলিও দেখলেন যে, শুক্রের কলাহ্রাস ও কলাবৃদ্ধি ঘটে। অর্থাৎ চাঁদের মতো শুক্রেও আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। যেহেতু চাঁদও পৃথিবীর চারদিক প্রদক্ষিণ করে, তাই এই ঘটনা তখনই সম্ভব যদি গ্রহটি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এই আবিষ্কার যে কোপারনিকাসকেই সুপ্রতিষ্ঠিত করল তা নয়, অ্যারিস্টটলপন্থীরাও কোণঠাসা হয়ে পরলেন। এক'শ বছর আগে কোপারনিকাস বলেন, ''চাঁদের মতো বুধ ও শুক্রেরও কলাহ্রাস ও কলাবৃদ্ধি ঘটে। আমাদের দৃষ্টি শক্তি বাড়িয়ে এই কলা (phase) দেখা সম্ভব।'' গ্যালিলিও এই আবিষ্কার প্রকৃতপক্ষে কোপারনিকাসের মতবাদকে এক নব আঙ্গিকে প্রকাশ করল বিজ্ঞানের জগতে।
সৌর-কলঙ্ক : গ্যালিলিও ও অন্যান্যরা
জ্যোতির্বিজ্ঞানে চীনা জ্যোতির্বিদদের অবদান অনস্বীকার্য। সূর্যের এক আদি রহস্য সৌর-কলঙ্কের কথা বহু পূর্বে তাঁরা জেনেছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু তাদের এই মতবাদ কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। যাই হোক, গ্যালিলিওর দূরবীনের মাধ্যমে আবার নতুন করে শুরু হল এ নিয়ে গবেষণা। কেপলার এই সৌরকলঙ্ক আগেই দেখেন। তিনি একে শুক্রের সরনের ফলে উদ্ভুত দাগ বলে ভাবেন। তিনি ভুল ছিলেন। ১৬১০ এর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে গ্যালিলিও এ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। প্রায় একই সময়ে ইংল্যান্ডের জন হ্যারিয়ট, হল্যান্ডের জন ফ্র্যাবিসিয়াস ও জার্মানিতে জেসুইট শিনার একই সময়ে সৌরকলঙ্কের উপর গবেষণা শুরু করেন। গ্যালিলিও তাঁর বেমনালব্ধ ফলাফল ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশ করেন। ফলে সৌরকলঙ্ক আবিষ্কারের কৃতিত্ব চার বিজ্ঞানীরই প্রাপ্য।
১৬১১ তে প্রকাশিত 'De Maculis Sole Observatis' বইতে ফ্রাব্রিসিয়াস সূর্যপৃষ্ঠে সৌরকলঙ্কের অবস্থান নিয়ে তাঁর যুক্তি প্রমাণ দেখান। অপর দিকে ১৬১১ তে শিনার এই সৌরকলঙ্ক পর্যবেক্ষণ করেন। প্রথমে এতে তিনি দৃষ্টিভ্রম বলে ভাবলেও পরে এগুলিকে সূর্যের সামনে প্রদক্ষিণরত কয়েকটি গ্রহ বলে ভাবেন। কিন্তু, তাঁর এই ধারণা পরে ভুল প্রমাণিত হয়।
গ্যালিলিও তাঁর মতবাদ প্রকাশ করেন ১৬১২-র মে মাসে। ফ্যাব্রিসিয়াসের মতো তিনিও সৌরকলঙ্কের সূর্যপৃষ্ঠে অবস্থানকে সমর্থন করেন। সৌরকলঙ্কের স্থান পরিবর্তন দেখে তিনি বলেন যে, সূর্য নিজ কক্ষপথে আবর্তনশীল। সৌরকলঙ্কের গতি সমান নয়; মধ্যভাগে সর্বাধিক ও প্রান্তভাগে সর্বনিম্ন। জ্যামিতিক সাহায্যে গ্যালিলিও প্রমাণ করলেন সূর্য গতিশীল না হলে সৌরকলঙ্কের এতটা স্থান সম্ভব না। প্রসঙ্গত, তাঁর এই গবেষণা পরবর্তীতে সূর্যের বিষুব ও আবর্তনকাল নির্ণয়ে সহায়তা করে।
ধুমকেতু ও গ্যালিলিও
ধুমকেতু নিয়ে গ্যালিলিওর গবেষণা তেমন উচ্চমার্গের ছিল না। তিনি ধুমকেতুকে ও সাধারণ জ্যোতিষ্ককে একই পর্যায়ভুক্ত করেন। ১৬১৮ই আকাশে তিনটি ধুমকেতু দেখা যায়। গ্যালিলিওর তত্ত্বাবধানে এক ছাত্র এই ধুমকেতুর গতিপথ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। তিনি সফল হননি। পরে ইংরেজ জ্যোতির্বিদ হ্যালি তা আবিষ্কার করেন। ধুমকেতুর নাম হয় হ্যালির ধুমকেতু।
গ্যালিলিও তাঁর আবিষ্কার ১৬১৩ এর মধ্যে সম্পন্ন করেন। এই আবিষ্কার সমূহ তিনি লিখে রাখেন 'Dialouge concerning the two chief system of the world' বইতে। আজন্ম বিতর্কের সঙ্গী গ্যালিলিওর জীবনে এই বইকে কেন্দ্র করে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। সে এক অন্য প্রসঙ্গ। যাই হোক, বিজ্ঞান তথা পৃথিবীতে তাঁর অবদান সত্যিই ভোলার নয়। প্রবন্ধটা শেষ করা যাক বরঞ্চ আর এক মহান বৈজ্ঞানিক স্টিফেন হকিং এর উক্তি দিয়ে-
''যে কোন একক ব্যক্তিত্বের চেয়ে হয়তো বা বেশি কিছু ছিলেন গ্যালিলিও। আজকের এই আধুনিক বিজ্ঞানের জন্ম তাঁর জন্যই হয়েছে।''
এই আবিষ্কারকে প্রাচীনপন্থীরা দৃষ্টিভ্রম বলে উড়িয়ে দিতে চাইলেন। কিন্তু সত্য কখনও চাপা থাকে না। ইওরোপে তা ধীরে ধীরে গ্রহণযোগ্যতা পেল।
গ্যালিলিও - চাঁদের কলঙ্ক ও শনির বলয়
গ্যালিলিও তাঁর দূরবীনের সাহায্যে একের পর এক রহস্যের পর্দা উন্মোচন করতে থাকেন। আমরা যে কন সুন্দর কিছু বোঝাতে যার সঙ্গে তুলনা করতে থাকি, সেই চাঁদকেও গ্যালিলিও ছাড়লেন না। তিনি বললেন চাঁদ নাকি মোটেই সুন্দর না, বরঞ্চ, খানা, খন্দ, পাহাড়-পর্বতে ভর্তি। গ্যালিলিওর মাথায় এবার ভাবনা এল যে, এই পাহাড়-পর্বতের উচ্চতা মাপলে কেমন হয়? যেমন ভাবা তেমন কাজ। মেপে ফেললেন উচ্চতা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আধুনিক পর্যবেক্ষণের থেকে তাঁর মাপজোপ ছিল যৎসামান্য বেশি।
১৬১০ খ্রিষ্টাব্দের শেষভাগে গ্যালিলিও পাদুশ ছেড়ে যাওয়ার আগে শনি গ্রহের এক অদ্ভুত বাহ্যিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। শনি যেন তিনটি ভাগে বিভক্ত। জীবদ্দশায় তিনি এর ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। ১৬৫৫ই ক্রিশ্চিয়ান হাইজেনস্ এর রহস্য উন্মোচন করেন। তিনি বললেন শনিকে ঘিরে বলয় রয়েছে। যার জন্য এর এরকম চেহেরা।
শুক্রগ্রহ ও গ্যালিলিও
ফ্লোরেন্সে এসে গ্যালিলিও শুরু করলেন শুক্রগ্রহ নিয়ে গবেষণা। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী টলেমি বলেন যে, শুক্রের অর্ধাংশ সর্বদা অন্ধকার ও অর্ধাংশ সর্বদা আলোকিত থাকে। কিন্তু, গ্যালিলিও দেখলেন যে, শুক্রের কলাহ্রাস ও কলাবৃদ্ধি ঘটে। অর্থাৎ চাঁদের মতো শুক্রেও আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। যেহেতু চাঁদও পৃথিবীর চারদিক প্রদক্ষিণ করে, তাই এই ঘটনা তখনই সম্ভব যদি গ্রহটি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এই আবিষ্কার যে কোপারনিকাসকেই সুপ্রতিষ্ঠিত করল তা নয়, অ্যারিস্টটলপন্থীরাও কোণঠাসা হয়ে পরলেন। এক'শ বছর আগে কোপারনিকাস বলেন, ''চাঁদের মতো বুধ ও শুক্রেরও কলাহ্রাস ও কলাবৃদ্ধি ঘটে। আমাদের দৃষ্টি শক্তি বাড়িয়ে এই কলা (phase) দেখা সম্ভব।'' গ্যালিলিও এই আবিষ্কার প্রকৃতপক্ষে কোপারনিকাসের মতবাদকে এক নব আঙ্গিকে প্রকাশ করল বিজ্ঞানের জগতে।
সৌর-কলঙ্ক : গ্যালিলিও ও অন্যান্যরা
জ্যোতির্বিজ্ঞানে চীনা জ্যোতির্বিদদের অবদান অনস্বীকার্য। সূর্যের এক আদি রহস্য সৌর-কলঙ্কের কথা বহু পূর্বে তাঁরা জেনেছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু তাদের এই মতবাদ কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। যাই হোক, গ্যালিলিওর দূরবীনের মাধ্যমে আবার নতুন করে শুরু হল এ নিয়ে গবেষণা। কেপলার এই সৌরকলঙ্ক আগেই দেখেন। তিনি একে শুক্রের সরনের ফলে উদ্ভুত দাগ বলে ভাবেন। তিনি ভুল ছিলেন। ১৬১০ এর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে গ্যালিলিও এ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। প্রায় একই সময়ে ইংল্যান্ডের জন হ্যারিয়ট, হল্যান্ডের জন ফ্র্যাবিসিয়াস ও জার্মানিতে জেসুইট শিনার একই সময়ে সৌরকলঙ্কের উপর গবেষণা শুরু করেন। গ্যালিলিও তাঁর বেমনালব্ধ ফলাফল ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশ করেন। ফলে সৌরকলঙ্ক আবিষ্কারের কৃতিত্ব চার বিজ্ঞানীরই প্রাপ্য।
১৬১১ তে প্রকাশিত 'De Maculis Sole Observatis' বইতে ফ্রাব্রিসিয়াস সূর্যপৃষ্ঠে সৌরকলঙ্কের অবস্থান নিয়ে তাঁর যুক্তি প্রমাণ দেখান। অপর দিকে ১৬১১ তে শিনার এই সৌরকলঙ্ক পর্যবেক্ষণ করেন। প্রথমে এতে তিনি দৃষ্টিভ্রম বলে ভাবলেও পরে এগুলিকে সূর্যের সামনে প্রদক্ষিণরত কয়েকটি গ্রহ বলে ভাবেন। কিন্তু, তাঁর এই ধারণা পরে ভুল প্রমাণিত হয়।
গ্যালিলিও তাঁর মতবাদ প্রকাশ করেন ১৬১২-র মে মাসে। ফ্যাব্রিসিয়াসের মতো তিনিও সৌরকলঙ্কের সূর্যপৃষ্ঠে অবস্থানকে সমর্থন করেন। সৌরকলঙ্কের স্থান পরিবর্তন দেখে তিনি বলেন যে, সূর্য নিজ কক্ষপথে আবর্তনশীল। সৌরকলঙ্কের গতি সমান নয়; মধ্যভাগে সর্বাধিক ও প্রান্তভাগে সর্বনিম্ন। জ্যামিতিক সাহায্যে গ্যালিলিও প্রমাণ করলেন সূর্য গতিশীল না হলে সৌরকলঙ্কের এতটা স্থান সম্ভব না। প্রসঙ্গত, তাঁর এই গবেষণা পরবর্তীতে সূর্যের বিষুব ও আবর্তনকাল নির্ণয়ে সহায়তা করে।
ধুমকেতু ও গ্যালিলিও
ধুমকেতু নিয়ে গ্যালিলিওর গবেষণা তেমন উচ্চমার্গের ছিল না। তিনি ধুমকেতুকে ও সাধারণ জ্যোতিষ্ককে একই পর্যায়ভুক্ত করেন। ১৬১৮ই আকাশে তিনটি ধুমকেতু দেখা যায়। গ্যালিলিওর তত্ত্বাবধানে এক ছাত্র এই ধুমকেতুর গতিপথ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। তিনি সফল হননি। পরে ইংরেজ জ্যোতির্বিদ হ্যালি তা আবিষ্কার করেন। ধুমকেতুর নাম হয় হ্যালির ধুমকেতু।
গ্যালিলিও তাঁর আবিষ্কার ১৬১৩ এর মধ্যে সম্পন্ন করেন। এই আবিষ্কার সমূহ তিনি লিখে রাখেন 'Dialouge concerning the two chief system of the world' বইতে। আজন্ম বিতর্কের সঙ্গী গ্যালিলিওর জীবনে এই বইকে কেন্দ্র করে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। সে এক অন্য প্রসঙ্গ। যাই হোক, বিজ্ঞান তথা পৃথিবীতে তাঁর অবদান সত্যিই ভোলার নয়। প্রবন্ধটা শেষ করা যাক বরঞ্চ আর এক মহান বৈজ্ঞানিক স্টিফেন হকিং এর উক্তি দিয়ে-
''যে কোন একক ব্যক্তিত্বের চেয়ে হয়তো বা বেশি কিছু ছিলেন গ্যালিলিও। আজকের এই আধুনিক বিজ্ঞানের জন্ম তাঁর জন্যই হয়েছে।''
*******
তথ্যসূত্র
*সমরেন্দ্রনাথ সেন, বিজ্ঞানের ইতিহাস-২য় খণ্ড(পৃ: ৩০৭-৩০৮), শৈব্যা প্রকাশন বিভাগ।
1. wikipedia- the free encyclopedia en' wikipedia.org
2. বিজ্ঞানী গ্যালিলিও, কমল বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়, জ্ঞান বিচিত্রা প্রকাশনী।
*সমরেন্দ্রনাথ সেন, বিজ্ঞানের ইতিহাস-২য় খণ্ড(পৃ: ৩০৭-৩০৮), শৈব্যা প্রকাশন বিভাগ।
1. wikipedia- the free encyclopedia en' wikipedia.org
2. বিজ্ঞানী গ্যালিলিও, কমল বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়, জ্ঞান বিচিত্রা প্রকাশনী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন