শিউলি

II সেখ মোজাম্মিল II


    
    বেপরোয়া, তাজালো, ঝাঁকড় ফুলেভরা গাছটা একান্ত বাধ্য হয়ে কাটতে হচ্ছে বলে সবার খুব মন খারাপ। শরতের সকালে শিউলির গন্ধে মঃ! মঃ! করতো এলাকাটা। গাছটা না কাটলেই নয়। একান্নবতী থেকে পৃথগন্ন তিন ভায়ের সংসার ও বাড়ন্ত। বড়ো তরফের বড়ো ছেলের বিয়ে। তার জন্য আলাদা ঘর দরকার।

    আজ থেকে দশ বছর আগে এইই শিউলি গাছটা একজন খাস করে লাগিয়েছিল। লাগানোর সময় তার মা আপত্তি করেছিল – হা হতভাগি ! ওটা তো আমাদের ভাগের জায়গা না! ওটা তো! মেয়ে বেশ সুন্দর জবাব দিয়েছিল – তাতে কী মা ? ফুল ফুটলে তো সবায় গন্ধ পাবে ! সবার বাড়িরই পূজো হবে।

    দৃশ্য দেখে আজ তার মায়ের সেকি আঁছাড়ি-পিছাড়ি কান্না ! আমারও খুব খারাপ লাগছিল। সে আমার একান্ত খেলার সাথি, সহপাঠিনীও ছিল।
    আমাদের ঝড়-ঝঞ্জার বয়সে একদিন ও টিউশ্যান পড়তে গিয়েঅনেক খুঁজে খুঁজেও…! সবাই কুলোটা ভেবেসময়ে পলিতে সব চাঁপা পড়ে গ্যাছে। কিন্তু তার মুঠো মুঠো শিউলিভুলতে পারিনা আজও।

    মহালয়া শুনতে শুনতে মন খারাপের ঘোরে কখন ঘুমিয়ে পড়ে- শিউলি বনে লিকোচুরি খেলছিলাম। হঠাৎ স্ত্রীর প্রবল ধাক্কাতে জেগে উঠি
-শুনছো পাশের বাড়িতে দারুণ হৈ চৈশিউলি ফিরে এসেছে। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকিকিছুই বোধগম্য হয় না।
-আরে- ঐ যে – তোমার ভালোবাসা…! ওকে কারা অপহরণ করে পাঁচ বছর আটকে রেখে – পালিয়ে এসেছে
আমি আমি লুঙিটাকে কোন রকমে সামলে ছুটে যাই। বুকে শুধু একটাই শঙ্কা – আবাহনেই বিসর্জন হবে না তো ! 
------




কবি পরিচিতি


জন্মস্থান : সরুলিয়া, বেলডাঙা, মুর্শিদাবাদ জেলা, পশ্চিমবঙ্গ ।

পেশা :শিক্ষকতা ।






শেয়ার করুন

1 টি মন্তব্য: