টিপসই

সাবির চাঁদ

গ্রামের নাম নিশ্চিন্তপুর। নরনারায়ণ চৌধুরী। মহাজন। জোতদার। প্রতিপত্তিশালী। বাঘে গরুকে এক ঘাটে জল খাওয়ান। চাঁদির জুতো মেরে আইন-আদালত কব্জায়।
এই গ্রামের এক হতদরিদ্র বাসিন্দা রতন হাজরা। বিঘে খানেক ধান জমি। বর্ষার জলের উপর চাষ ভরসা। আর দিন মজুরি। এক ছেলে দুই মেয়ের পরিবারে এটাই তার রুটি-রুজি।
সেবার বরুণদেব অপ্রসন্ন হলেন। বর্ষার মরসুম পার হতে চলল। বৃষ্টির তেমন দেখা নেই! অনাবৃষ্টি। অকালখরা!চাষ করা গেল না। মাঠ ফুটিফাটা। খাদ্যাভাব। পরিবারের মুখে দুমুঠো ক্ষুধার অন্ন তুলে দিতে মহাজনের কাছে  কর্জ ছাড়া নিরুপায়। শেষ সম্বল জমিটুকু রতনের বাঁধা পড়ল।

পরের বার ভালো বর্ষা হ'ল। মাঠভরা সোনালি ধান। রতনের মতো দরিদ্র প্রান্তিক চাষীদের মুখে হাসি ফুটল। কিন্তু এই সুখ ক্ষণিকেই বর্ষার জলের বুদবুদের মতো বিলীন হল। ফসলভরা জমির দখল নিল মহাজনের  লোকজন। সঙ্গের গোমস্তা জমির দলিলে রতনের টিপসই দেখিয়ে জানালেন জমি দেনার দায়ে বিক্রি হয়েছে। রতনের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল! বিধাতার একী করুণ পরিহাস!
--------
(৮ই সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে  অণুগল্পটি রচিত)



লেখক পরিচিতি


জন্মস্থানঃ রেজিনগর, মুর্শিদাবাদ

পেশাঃ শিক্ষকতা, রামপাড়া মাঙ্গনপাড়া হাইস্কুল(উ.মা.)



শেয়ার করুন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন