নিবেদিতা মজুমদার
যেদিন তেরঙ্গা ওড়ে-
প্রত্যেক অলিগলির আকাশে
ক্লাসঘরের ছাদে,কলেজের
মাঠে
লতাজীর কন্ঠে-
"সারে জাহাঁ সে আচ্ছা,হিন্দুউস্তা হামারা" দিনভোর,
লজেন্স চুষতে চুষতে
পতাকা হাতে দৌড় লাগায়
যেদিন প্রত্যেক ঘরের
সোনার চাঁদেরা,
সেদিন বুঝি, আজ আমাদের
স্বাধীনতার দিন।
যেদিন বাড়ি ফিরতে রাত
হয়ে যায়,
গা ছম ছম গলির রাস্তায়
কুকুরেরা তাড়াহুড়ো করে,
বুকের ভিতরে আজানা আতংক,
ছায়াছায়া মূর্তিরা ঘুরে
বেড়ায় আবছায়ায়
পায়ের দ্রুততা জানান
দেয়-
আজ স্বাধীনতা নয়।
যদিও আমি প্রেত পিশাচে
বিশ্বাসী নই!
এলাকার জনদরদী নেতার
মেয়ে,ভাইপো
যখন পরীক্ষা হলে নকলের
কাগজ নিয়ে চোখেচোখ রাখে,
মনে হয় এক চড়ে রক্তিম
হয়ে যাক সমস্ত ক্লাসঘর,
তখনি দম্ভের হাসি হাসে
আমাকে কবর দেওয়া একমুঠো সীমারেখা,
বুঝি,আজ স্বাধীনতা দিবস
নয়।
যদিও আমি আপোষ করতে
অনভ্যস্ত!
ইন্টার্ভিউ বোর্ড থেকে
বেড়িয়ে আমার হাত চেপে
নির্ভেজাল হতাশাকে ঢোক
গিলে আমার ভাই বলে,
দিদি,আটলাখ চাইছে!
আমি পাতালে প্রবেশ করতে
করতে শুনতে পাই
ওহে- আজ দাসত্বের দিন,স্বাধীনতার
নয়।
যদিও আমি মুখোশ টেনে ছিড়তে এতোটুকু ভয় পাইনা!
ভোররাতে রক্তজল করা
উপার্জন খুইয়ে এসে যখন
আমার বাবা আশরীর নুন মেখে শুয়ে পড়ে আধমরা হয়ে,
আর্তনাদে ভরে ওঠে উদীয়মান
সূর্যের ছটা,
চেনামুখ গুলোকে দানব
সেজে উঠতে দেখে
ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে
যায় মানুষটা,
রাতের ফিসফিস কেটে যায়
তীক্ষ্ণ আঁচড়,
বলে যায়,আজ তো নয়,আলহাদের
স্বাধীনতা।
যদিও প্রতিবাদে পিছপা
হইনি কোন মিছিলে!
হাজার দাসত্ব উপেক্ষা
করেও
জামাছেঁড়া হয়ে রাস্তায়
পড়ে থাকে ওপাড়ার ললিতা,
পাশ দিয়ে কুকুরেরা কাঁটাছেড়া
থেকে ঝরে পড়া
রক্তের ঘ্রান নিয়ে চলে
যায়,
নক্সিকাঁথা জড়ানো সাইরেনে
ঘুম ভাঙেনা তবু সকালের,
বোকাবাক্সে বুদ্ধিঝাড়া
শকুনের দল তোলে কৈফিয়তের হাহাকার,
মেডিকেল টেস্ট হয় ক্ষতবিক্ষত
ললিতার,
চিৎকার করে বলে উঠি
নিজে
আজ স্বাধীনতা নয়?
যদিও আমি মূক ও বধির
নই কস্মিনকালেও!
আকাশে পতপত করে স্বপ্নের
তিনটি রঙ উড়তে থাকে
ছেঁড়াছেঁড়া মেঘের ডানার
উপর ভর করে,
চোখের জলে ধোয়া আমার
স্বাধীনতারা
রান্নাঘরের তেলে ঝোলে
মিশে গিয়ে সুর ধরে,
"হাম বুলবুলে হে
ইস্কি,ইয়ে গুলসিতা হামারা"!
জেটপ্লেন রঙ ছড়িয়ে দেয়
স্বাধীন আকাশে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন